শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের ২০০ ফুট ভেঙে গেছে। এতে সুন্দরবনসংলগ্ন দুর্গাবাটি, পূর্ব দুর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, চুনা, হেঞ্চি, আড়পাঙ্গাশিয়াসহ নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ি ঘের। লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য সুপেয় পানির পুকুর ও জলাধার।
ভাঙনকবলিত অংশের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নীলকান্ত রপ্তান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ বিকট শব্দে স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টারের পূর্ব প্রান্তের উপকূল রক্ষাবাঁধের অন্তত ২০০ ফুট ধসে পড়ে। এরপর রাতের জোয়ারে প্লাবিত হয় গ্রামগুলো। স্থানীয়দের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগরের ৫নং পোল্ডারের ওই অংশের বাঁধ দীর্ঘদিন দুর্বল অবস্থায় ছিল। গতকাল সকাল থেকে বাঁশের পাইলিং দিয়ে মাটি ফেলে রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দুর্গাবাটির বিভিন্ন অংশে কোটি কোটি টাকার কাজ করা হলেও ভাঙনকবলিত অংশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাটির কোনো কাজ করা হয়নি। এছাড়া প্রভাবশালীরা পাশের নদী থেকে কোটি কোটি ঘনফুট বালি উত্তোলন করায় চর দেবে গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি তদারকি করেননি।
বুুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে। দুপুরের জোয়ারে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। জোয়ার নামতে নামতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় কাজ করা কঠিন হবে। তিনি অভিযোগ করেন, পাশের খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা বালি উত্তোলন করায় চর দেবে গিয়ে পাশের অংশের বাঁধে ভাঙন লেগেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদীর চর দেবে যাওয়ার কারণে ৫০ মিটার বাঁধ ধসে পড়েছে। আমরা ১৬০ মিটার রিং বাঁধ দেব। সকাল থেকে বাঁশ দিয়ে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। জোয়ার আসায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। পুরো দিনই জোয়ার থাকায় কাজ করার সুযোগ মেলেনি। রিং বাঁধ নির্মাণে ১৫ হাজার জিওব্যাগ ও এক লাখ সিনথেটিক ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন জানান, খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধটি দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষিক মনিটর করা হচ্ছে।
এদিকে নদনদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হঠাৎ প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। বেশকিছু মৎস্য ঘেরও তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে। গতকাল সকালে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় তিন-চার ফুট পানি বাড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পানগুছি নদীর পানি গতকাল তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মোরেলগঞ্জ পৌরসভার কাপুড়পট্টি সড়ক, কাঁচাবাজার, ফেরিঘাট, কালাচাঁদ মাজার এলাকা, সানকিভাঙ্গা প্লাবিত হয়েছে। এর বাইরে উপজেলার ঘষিয়াখালী, জিউধরার পালেরখণ্ড, কাকরাতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা, জিউধরা, হোগলাবুনিয়ার ও বারইখালীসহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার চা দোকানি জামাল শেখ বলেন, ‘দুইদিন ধইরা জোয়োরের পানিতে মোগো পৌরসভার সবহানে পানিতে তলাইয়া গেছে। দুপুর সাড়ে ১১টা-১২টার মধ্যে পানিতে ভইরা যায় সবহানে। মুই চেয়ার পাইত্তা তার উপরে বইসা দোহানদারি হরতে আছি।’
অন্যদিকে মোংলা-ঘষিয়াখালী বঙ্গবন্ধু নৌ-চ্যানেলসহ দাউদখালী, বগুড়া, তেঁতুলিয়া নদীর পানি বেড়ে রামপাল উপজেলার গিলাতলা বাজার, বাঁশতলী, ভোজপাতিয়া, হুড়কা, রাজনগরসহ পেড়িখালী ইউনিয়নের অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। মোংলা উপজেলারও কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের সময় সব নদীর পানি বাড়ছে। ফলে মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাসহ ওই উপজেলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মূলত এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেয়া হবে।